বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১২

কী লিখি তোমায়!





একটু আগেভাগেই রাতের খাবারটা শেষ করে বেডরুমে এসেছি। জানালা দিয়ে জোছনার ঢল নেমেছে মেঝেতে। কিন্তু সেদিকে নজর করার ফুরসত কোথায়! মাথায় তখন একটাই চিন্তা। একটা কবিতা নামাতে হবে আজ রাতেই। অথচ সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এমন বিপদে এর আগে কখনও পড়িনি।

খাতা কলম নিয়ে বসলাম। থুতনি চুলকাই, মাথা চুলকাই। কিন্তু কবিতা আসেনা। কিছুক্ষণের মধ্যে মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেল। অন্যদিকে বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়েছে। সে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। ধুরছাই, কাল স্কুলেই যাব না!

কিন্তু তাতে কোন সমাধান হচ্ছে না। ধীরে ধীরে অজানা এক ব্যথা টের পাই। গলার কাছে কী যেন আটকে আসছে। বৃষ্টি নামে চোখে। আমি অবাক হয়ে বসে থাকি।

মনের মধ্যে কে যেন বলে ওঠে, কী হল তোমার! কিছু একটা লিখে ফেল। মনের আয়নায় সেই আকুতি ভরা মুখ ভেসে ওঠে। আমি সম্মোহিতের মত লিখে যাই।

কী লিখি তোমায়
বাতাসে ভেসে আসা সুর
দোয়েলের শীষ আর দীঘির কেঁপে ওঠা জল
আমার ভাল লাগা সব দিলাম তোমায়


আসলে লিখতে চেয়েছিলাম, আমার ভালবাসা সব দিলাম তোমায়। কিন্তু কি এক শরম এসে জড়িয়ে ধরে, হাত অবশ হয়। কয়েকবার লিখতে গিয়েও তা লেখা হল না। এইটুকু লিখেছি এসময় ফজরের আজান ভেসে এল। ঘুম নেমে আসে চোখে।

আম্মুর ডাকাডাকিতে জেগে উঠি। স্কুলের সময় হয়ে গেছে। আজ প্রাকটিক্যাল ক্লাশ আছে। শেষ ঘন্টায় কেমিস্ট্রি স্যারের ক্লাশ নেয়ার কথা। তিনি দপ্তরিকে পাঠালেন আজ ক্লাশ হবে না। বন্ধুরা মেতে উঠেছে গান কবিতায়। আর জানালা দিয়ে আমি তাকিয়ে আছি মাঠের ওপারে রেন্ট্রি তলায় প্রাইমারির ছাত্রীদের জটলার দিকে। সেখানে লালে মেশানো ক্রিম কালারের ওড়না মাথায় একটা পরী চালতার আচার কিনছে।

স্কুল থেকে ইলা দৌড়ে সেখানে গেল। দুই বোনের আচার খাওয়া চলছে। কিছুক্ষণ পর প্রাইমারীর বারান্দা দিয়ে উত্তর প্রান্তে এসে থামল তারা। এবার ইলা এগিয়ে এসে আমাকে বলল, ভাইয়া, বইটা এনেছ ত। এক্ষুনি দেও। আপুর তাড়া আছে। আমি বইটা তার হাতে দিতেই দৌড়ে চলে গেল।

মুন্নি বইটা হাতে নিয়ে ঘুরে দাড়ালো অন্যদিকে মুখ করে। যেন কিছুই হয়নি। বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা খুজছে সে বইয়ের ভেতর। হঠাৎ মুহুর্তের জন্য আমার দিকে ফিরে তাকাল। আমি ভেজা চোখের এক অপার্থিব চেহারা দেখতে পেলাম। যেন পৃথিবীর সবটুকু খুশি সেই মুখে এসে জমেছে। তারপর তাড়া খাওয়া হরিণীর মত সে ছুটে পালাল।

চলবে-

 ১ম পর্ব

২য় পর্ব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন